অলিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ কেশবপুরে প্রতিবন্ধী রিফাত হাসান রাব্বি নামে এক স্কুল ছাত্রকে হুইল চেয়ার প্রদান করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন। ৮ নভেম্বর (সোমবার) দুপুরে উপজেলা কার্যালয় চত্তরে উপজেলার বিষ্ণুপুর আনন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রকে ১টি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের শাহাজাহান মল্লিকের ছেলে রিফাত হাসান রাব্বি জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। পায়ের নিচের অংশ চিকন ও বাঁকা হওয়ায় হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে হতো তাকে।
দারিদ্র পরিবারের মাঝে জন্ম তবুও লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে সে হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে যেতে চায়। তার স্বপ্ন হলো লেখা-পড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে।

তার পিতা শাহাজাহান মল্লিক করিমন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অল্প উপার্জনের মধ্যে দিয়ে সংসার চলে অভাব-অনাটনে। শারীরিক অক্ষমতা ও দ্রারিদ্রতার কষাঘাতে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো রাব্বীকে।

করিমন চালক পিতার পক্ষে শিশু পুত্রের জন্য একটি হুইল চেয়ার কিনে দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের কাছে প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য অসহায় পিতা একটি হুইল চেয়ারের সহযোগিতা চেয়েও সেটি না পেয়ে, শুধুই আশ্বাস পেয়েছিলেন। শুধুমাত্র একটি হুইল চেয়ার হলেই প্রতিবন্ধী রিফাতের জীবনের স্বপ্নপূরণ হতে পারে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার। এমন একটি মুহূর্তে নিজের চলা-ফেরা ও স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছিলেন ১২ বছরের প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র রিফাত হাসান রাব্বি।

এমন একটি নির্মম কাহিনী সাংবাদিকদের নজরে আসে। তার স্বপ্ন পূরণে সাংবাদিকদের লেখার মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ওই সংবাদটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম আরাফাত হোসেনের নজরে পড়েন। তারই একান্ত প্রচেষ্টোয় এমন একজন প্রতিবন্ধীর লেখাপড়া ও উজ্জল ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতে ইচ্ছা পোষণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেনের সহযোগিতায় সোমবার সকালে প্রতিবেদক এনামুল হাসান নাইম ও ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি ,গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলার শাখার সভাপতি সাংবাদিক শামিম আখতার মুকুল এবং প্রতিবন্ধী রাব্বি বাবা শাহাজান মল্লিক ও মায়ের উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী রিফাত হাসান রাব্বিকে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়।

প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র রিফাত হাসান রাব্বি হুইল চেয়ার পেয়ে হাস্যোজ্জল মুখে বলেন, আমাকে হুইল চেয়ার দেওয়ায় আমার চলাফেরা ও স্কুলে যেতে কষ্ট অনেক কম হবে। আমি এখন হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে যেতে পারবো। লেখা-পড়া শিখে আমি মানুষের মতো মানুষ হবো। আমাকে সহায়তা করায় সারাটি জীবন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।

হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দে কেঁদে প্রতিবন্ধীর পিতা শাহাজাহান মল্লিক বলেন, খুব ছোট বেলা থেকেই আমার প্রতিবন্ধী ছেলের স্কুলে যাওয়ার বায়না ছিল। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে তাকে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম।

স্বামী-স্ত্রী যে যেদিন সময় পায় তাকে কোলে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে হতো। ছেলে বড় হওয়ায় এখন অনেক কষ্ট হয় কোলে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে। অভাবের কারণে তাকে হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমার ছিলোনা।
হুইল চেয়ারটি পাওয়ার কারণে এখন থেকে ছেলে ও আমাদের অনেক কষ্ট কম হবে। আমার ছেলেকে হুইল চেয়ার প্রদান করায় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন স্যার সহ গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও লেখা-পড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকার বিষয়টি সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আমি জানতে পেরে প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র রিফাত হাসান রাব্বিকে স্কুলে যাওয়ার ও চলাফেরা করার জন্য ১টি হুইল চেয়ার প্রদান করতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। আমি তার উজ্জল ভবিষ্যত গড়ার লক্ষে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।